দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে, পুরো বিশ্বে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পশ্চিমা দেশগুলো তখন বিশ্ব অর্থনীতির কাঠামো শক্তিশালী এবং গতিশীল করার জন্য একটি নতুন সিস্টেম প্রবর্তন করে। এই সিস্টেমটি 'Bretton Woods System' নামে পরিচিত ছিল।
এই চুক্তির অধীনে, সোনার মূল্যের বিপরীতে আমেরিকান ডলার এর বিনিময় হার নির্ধারণ করা হতো। এর ফলে, অন্যান্য দেশের মুদ্রাগুলোর মান ডলার বিপরীতে অবমূল্যায়িত হতে থাকে।
প্রাথমিকভাবে, এই ব্যবস্থা বিশ্ব অর্থনীতির বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা আনতে সক্ষম হলেও, অন্যান্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতির পথে গেলে এই সিস্টেমটি কার্যকরীভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতির চাকা ভিন্ন ভিন্ন গতিতে সচল করতে শুরু করে, যার ফলে Bretton Woods চুক্তির ব্যবহার সীমিত হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত এটি বাতিল হয়ে যায়।
১৯৭১ সালের দিকে Bretton Woods Agreement বাতিল হওয়ার পর, একটি নতুন মুদ্রা মূল্যনির্ধারণ ব্যবস্থা চালু হয়। এই নতুন ব্যবস্থায়, কারেন্সি বিনিময় হার নির্ধারিত হয় বাজারে সেই কারেন্সির চাহিদা এবং যোগানের ভিত্তিতে।
প্রাথমিকভাবে, এক্সচেঞ্জ রেট সঠিকভাবে নির্ধারণ করা বেশ কঠিন ছিল, তবে সময়ের সাথে এবং প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এটি অনেক সহজ হয়ে ওঠে। ১৯৯০ সালের দিকে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের উন্নতির সময়, ব্যাংকগুলো নিজ নিজ ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে শুরু করে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো গ্রাহকদের রিয়েল টাইম প্রাইস মুভমেন্ট চার্টের মাধ্যমে ট্রেড করার সুবিধা প্রদান করে।
এরপর, অনলাইনে ট্রেডিংয়ের জন্য একটি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাব ঘটে, যা "Retail Forex Brokers" নামে পরিচিত। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ফরেক্স ট্রেডিং করা সহজ হয়ে ওঠে এবং ট্রেডিং সাইজ বা লটও ছোট করা যায়। যেখানে ইন্টারব্যাঙ্ক ট্রেডিংয়ের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড লট ১ মিলিয়ন ইউনিট, রিটেইল ফরেক্স ব্রোকাররা ক্লায়েন্টদের জন্য সর্বনিম্ন লটে ট্রেড করার সুযোগ দেয়, যেমন ১০০০ ইউনিট।
Retail Forex Brokers
প্রাথমিকভাবে, ফরেক্স ট্রেডিং শুধুমাত্র বড় পরিমাণ বিনিয়োগকারীদের জন্য উপলব্ধ ছিল, যাদের বিনিয়োগ পরিমাণ ছিল ২-৫ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। তবে, রিটেইল ফরেক্স ব্রোকারদের আগমনের সাথে এবং ইন্টারনেট সেবার উন্নতির ফলে আমরা এখন খুব কম পরিমাণ বিনিয়োগ করে ফরেক্স ট্রেডিং শুরু করতে পারি।
বর্তমান প্রক্রিয়া যা আমরা ফরেক্স ট্রেডিংয়ের জন্য ব্যবহার করি তা হল Retail Forex Brokers সিস্টেম। অর্থাৎ, ফরেক্স ট্রেড করার জন্য আমাদের একটি ব্রোকারের মাধ্যমে করতে হয়। তবে এই প্রক্রিয়া এখন অনেক সহজ। কোনো একটি ব্রোকার খুঁজে, সেখানে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন, ভেরিফিকেশন, ফান্ড ডিপোজিট করে ঘরে বসেই ট্রেডিং সুবিধা পাওয়া যায়।
এই ব্রোকারগুলো মূলত দুই ধরনের হয়:
- Market Makers: এই ধরনের ব্রোকার কারেন্সি পেয়ারের Bid এবং Ask প্রাইস তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি ফ্রান্সে গেলে, আপনার ইউরো এক্সচেঞ্জ করার জন্য একটি স্থানীয় কারেন্সি এক্সচেঞ্জ বুথে যাবেন। এখানে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জার আপনাকে ডলার এর বিপরীতে ইউরো এক্সচেঞ্জ করবে। এই স্থানীয় এক্সচেঞ্জের স্প্রেড হলো দুইটি প্রাইসের মধ্যে পার্থক্য, যা ব্রোকারের প্রফিট। উদাহরণস্বরূপ, EUR/USD কারেন্সি পেয়ারে স্প্রেড হতে পারে 0.0002।
Market Makers বড় সাইজের লটকে ছোট ছোট লটে ভাগ করে তাদের ক্লায়েন্টদের প্রদান করে এবং বিভিন্ন লটের প্রাইস বিভিন্নভাবে নির্ধারণ করে। তারা বড় লটে পাইকারি মূল্যে কারেন্সি পেয়ার কিনে ছোট লটে খুচরা মূল্যে বিক্রি করে।
- Electronic Communication Networks (ECN): এই ধরনের ব্রোকার ক্লায়েন্টের বাই/সেল এন্ট্রি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট প্রাইসে সম্পন্ন করে। ব্রোকার বিভিন্ন ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ECN নেটওয়ার্ক থেকে প্রাপ্ত প্রাইস ব্যবহার করে। ECN ব্রোকারগুলি ট্রেডিং প্রক্রিয়া অনুসারে নিজে ইচ্ছামত প্রাইস নির্ধারণ করতে পারে না, যার ফলে স্প্রেডের পরিমাণ কম থাকে। তারা স্প্রেডের বাইরে প্রতি ট্রেডে খুবই অল্প পরিমাণ কমিশন চার্জ করে, ফলে ট্রেডিং খরচ কম থাকে।
আশা করি, উপরের আর্টিকেলটি আপনার পছন্দ হয়েছে। যদি এই আর্টিকেল নিয়ে আপনার কোনো বিশেষ প্রশ্ন থাকে, তবে অনুগ্রহ করে নিচের কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করুন। আমাদের এক্সপার্ট ট্রেডাররা শীঘ্রই আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবেন। এছাড়াও, ট্রেডিং এনালাইসিস এবং সিগন্যাল গ্রহণের জন্য আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হোন।
এবার সময় হয়েছে ডেমো ট্রেডিং এর। একটি ডেমো অ্যাকাউন্ট খুলুন।