ফরেক্স ট্রেডিং এর জনপ্রিয়তা অনেক কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু বিশেষ সুবিধার জন্য, এই মার্কেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে, যদিও ঝুঁকি রয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা ফরেক্স ট্রেডিংয়ের কিছু বিশেষ সুবিধা নিয়ে আলোচনা করব।
অথবা বলা যেতে পারে, কেন ফরেক্স ট্রেডিং করবেন সেই প্রশ্নের উত্তর এখানে পাবেন। চলুন শুরু করা যাক।
কমিশন নেই
ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে কোনো অতিরিক্ত ফি বা চার্জ দিতে হয় না। অর্থাৎ, ফরেক্স ট্রেডিংয়ের জন্য কোনো বার্ষিক চার্জ, এক্সচেঞ্জ ফি, সরকারি ফি, বা ব্রোকারের কোনো ফি প্রদান করতে হয় না। ব্রোকাররা তাদের কমিশন ট্রেডের বাই/সেল এন্ট্রি গ্রহন করে “স্প্রেড” হিসেবে নেয়। বাইরের কোনো চার্জ এখানে নেই।
নির্দিষ্ট লট সাইজ নেই
স্পট ফরেক্স মার্কেটে আপনি নিজের সুবিধামতো লট/ভলিউম নির্বাচন করতে পারবেন, যা স্টক বা ফিউচার মার্কেটে সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, সিলভারের ট্রেডিং লট সাইজ ৫,০০০ আউন্স হতে পারে, কিন্তু ফরেক্স মার্কেটে আপনি খুবই ছোট লট বা ভলিউম যেমন ১,০০০ ইউনিটের এন্ট্রি নিতে পারবেন।
কম ট্রানজেকশন খরচ
ফরেক্স ট্রেডিংয়ে ট্রানজেকশন খরচ বলতে বোঝানো হয় ট্রেডে এন্ট্রি নেওয়ার সময় যে স্প্রেড ব্রোকার চার্জ করে তা। যদিও খরচের পরিমাণ সাধারণত খুবই কম। সাধারণভাবে, এন্ট্রি ভলিউমের ০.১০% ব্রোকার স্প্রেড হিসেবে চার্জ করে, এবং এটি পিপসের হিসেবে নির্ধারিত হয়। বড় এন্ট্রির ক্ষেত্রে, স্প্রেডের পরিমাণ ০.০৭% হতে পারে, তবে এটি বাজারের প্রাইস মুভমেন্ট এবং লিভারেজের উপর নির্ভর করে।
২৪ ঘণ্টার বাজার
ফরেক্স মার্কেট শেয়ার বাজারের মতো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা থাকে না। আমাদের দেশের শেয়ার মার্কেটের মতো মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য খোলা হয় না। সপ্তাহের ৫ দিন, ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। সোমবার অস্ট্রেলিয়ান সময় সকাল ৫টায় শুরু হয় এবং শুক্রবার নিউইয়র্ক সময় দুপুরে শেষ হয়। অর্থাৎ, ফরেক্স মার্কেট কখনই বন্ধ থাকে না। এটি ব্যস্ত জীবনধারার মধ্যে সুবিধাজনক, কারণ আপনি যে কোনো সময় ট্রেডিং করতে পারবেন।
কোনো নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি নেই
ফরেক্স মার্কেটের লিকুইডিটির পরিমাণ এত বেশি যে একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর প্রাইসে পরিবর্তন আনতে পারে না। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি (যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট) বা সবচেয়ে বড় রিজার্ভ ব্যাংক (ফেডারেল রিজার্ভ) এরও এই বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই। ফরেক্স মার্কেটের প্রাইস মুভমেন্ট মূলত বাজারে সেই কারেন্সির চাহিদা ও যোগানের ওপর নির্ভর করে।
লিভারেজ
ফরেক্স মার্কেটে একটি ছোট ডিপোজিট দিয়ে একটি বড় লটের কন্ট্রাক্ট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সর্বোচ্চ লিভারেজ বড় আকারের ট্রেড করার সুবিধা প্রদান করে এবং ঝুঁকি কমায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ব্রোকার ৫০:১ লিভারেজ দিয়ে ট্রেডিং করতে দেয়। অর্থাৎ, $২,৫০০ এর ট্রেড করতে $৫০ মার্জিন দিয়ে শুরু করা যায়। লিভারেজ যেমন বড় প্রফিটের সুযোগ দেয়, তেমনি এটি বড় ক্ষতির কারণও হতে পারে।
লিকুইডিটি
ফরেক্স মার্কেটের বিশাল আয়তনের কারণে এর লিকুইডিটি অনেক বেশি। এটি সবচেয়ে বড় সুবিধা, কারণ আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসে পছন্দসই কারেন্সি পেয়ারে বাই বা সেল এন্ট্রি নিতে পারেন। কোনো সমস্যা হলে যেমন সার্ভার ডাউন বা এন্ট্রি ক্লোজ না হওয়া, এর কোনো ঝামেলা নেই। স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দেশনা সেট করে এন্ট্রি ক্লোজ করা সম্ভব।
কম বাধা
ফরেক্স ট্রেডিংয়ে শুরু করতে বিশাল ফান্ড বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। স্টক মার্কেট, অপশন বা ফিউচার মার্কেটের তুলনায় ফরেক্স ট্রেডিংয়ের বিনিয়োগ পরিমাণ কম। রিটেইল ফরেক্স ব্রোকারের কারণে মাইক্রো বা সেন্ট একাউন্টের সুবিধা পাওয়া যায়। কিছু ব্রোকার মাত্র $১ ডিপোজিট করেও ট্রেডিং এর সুযোগ দেয়।
ফ্রি স্টাফ
প্রায় প্রতিটি ফরেক্স ব্রোকার ফ্রি প্র্যাকটিস বা ডেমো একাউন্টের মাধ্যমে রিয়েল ট্রেডিংয়ের অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এর জন্য কোনো চার্জ বা ফি নেয় না। ডেমো একাউন্ট ব্যবহার করে মার্কেটের কার্যপ্রণালী ও ট্রেডিং কৌশল শিখতে পারবেন।
এতক্ষণ আমরা ফরেক্স ট্রেডিংয়ের কিছু বিশেষ সুবিধার কথা জানলাম। পরবর্তী লেকচারে, অন্যান্য ট্রেডিং মাধ্যম যেমন স্টক মার্কেটের সাথে এর তুলনা করা হবে।
আশা করি, উপরের আর্টিকেলটি আপনার পছন্দ হয়েছে। যদি এই আর্টিকেল নিয়ে আপনার কোনো বিশেষ প্রশ্ন থাকে, তবে অনুগ্রহ করে নিচের কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করুন। আমাদের এক্সপার্ট ট্রেডাররা শীঘ্রই আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবেন। এছাড়াও, ট্রেডিং এনালাইসিস এবং সিগন্যাল গ্রহণের জন্য আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হোন।
এবার সময় হয়েছে ডেমো ট্রেডিং এর। একটি ডেমো অ্যাকাউন্ট খুলুন।